ঢাকা বিভাগীয় বইমেলার শনিবার (৭ অক্টোবর) বিকেলে বাংলা একাডেমি চত্বরে উদ্বোধন হয়। ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ঢাকা বিভাগীয় বইমেলা চলে ১৪ অক্টোবর প্রতিদিন দুপুর ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় আয়োজিত আট দিনের এ বইমেলায় সহযোগিতা করে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি। বেসরকারি ৬৫টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি ২০টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয় এবারের মেলায়। মেলায় প্রায় ১০০টি স্টলের মধ্যে বিআইআইটি পাবলিকেশন্স এর স্টল মূল ভবনের পশ্চিম পার্শ্বে।
এবারের মেলার প্রতিপাদ্য ‘বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও সোনার বাংলার স্বপ্নযাত্রা’। প্রধান অতিথি হিসেবে বইমেলা উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার সাবিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক মিনার মনসুর এবং বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশ ও বিক্রেতা সমিতির সহসভাপতি কামরুল হাসান শায়ক। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঢাকা জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, পুস্তক বিক্রয় ও প্রকাশনা শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা খুব বেশি লাভের আশায় এর সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে না। তারা বরং ভালোবাসা, জ্ঞানপিপাসা ও হৃদয়ের খোরাক থেকে শিল্পটিকে টিকিয়ে রেখেছেন। কেননা, আজকাল মানুষ খুব বেশি বই কিনতে চায় না। বর্তমানে ৮টি বিভাগে পর্যায়ক্রমে বিভাগীয় বইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এরপর অনুষ্ঠিত হবে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসব।
মেলার মূল আয়োজক জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক ও কবি মিনার মনসুর জানান, ‘কারণে অকারণে আমরা সমালোচনাটাই বেশি করি। এমনটি হলে এগোনো যাবে না। এখনো বিভাগীয় বইমেলার একটি কাঠামো দাঁড় করাতে চাইছি আমরা। আমাদের এই ফরম্যাটটা তো প্রথম। অনেকে হয়তো বুঝে উঠতে পারেননি। অমর একুশে বইমেলা আজকের জায়গায় আসতে ২৫ বছর সময় লেগেছে। সবার সহযোগিতা পেলে বিভাগীয় বইমেলাও জাতীয় পর্যায়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারবে।’
ঢাকা বিভাগের অন্তর্ভুক্ত জেলাগুলো এই মেলায় অংশ নেয়। ছিল সৃজনশীল প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানও। ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ ও রাজবাড়ী জেলা থেকে স্থানীয়ভাবে প্রকাশিত বই ঠাঁই পায় মেলায়। পৃথক স্টলে জেলাগুলোর ইতিহাস-ঐতিহ্য লোক সংস্কৃতি, রাজনীতিসহ নানা বিষয়ে লেখা বই প্রদর্শিত হচ্ছে।
বইয়ের প্রদর্শনী ও বিক্রির পাশাপাশি নজরুল মঞ্চে প্রতিদিনই ছিল আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে বই দেখা, কেনা ও ছবি তোলার সুযোগ পেয়েছেন পাঠক-দর্শক। ঢাকাসহ ১৩ জেলার শিল্পী-সাহিত্যিকরা বইমেলার মঞ্চে নিজেদের ইতিহাস ঐতিহ্যের কথা বলছেন। সাংস্কৃতিক পরিবেশনা দিয়ে মুগ্ধ করছেন। এভাবে এই মেলার মধ্য দিয়ে পরস্পরকে আরও ঘনিষ্ঠভাবে জানার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
বইমেলায় অংশ নেওয়া সরকারের বিভিন্ন দপ্তর অধিদপ্তর বা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বাংলা একাডেমি, নজরুল ইনস্টিটিউট, জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্র, জাতীয় জাদুঘর, শিল্পকলা একাডেমির প্রকাশনা, সংকলন ইত্যাদি ছিল। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকাশিত মূল্যবান অনেক বই প্রদর্শিত হয়েছে মেলায়। বিশেষ করে বাংলা একাডেমির বইমেলাকে সমৃদ্ধ করেছে।